• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

প্রাচীন এক মসজিদ, অথচ নামাজ হয়নি কোনো দিন!

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লা শহরের উত্তর দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর সামান্য উত্তরে মাঝিগাছা গ্রাম। সেই গ্রামের সুন্দরী কিশোরী নূরজাহানকে সাপে কাটলে তাকে কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ভাসমান অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করেন ত্রিপুরা মহারাজার রাজদরবারের প্রধান বাইজি মেনেকা। পরে তাকে রাজদরবারে নিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে মেনেকা বাইজি নূরজাহানকে নাচ, গান শিখিয়ে গড়ে তোলেন ত্রিপুরা মহারাজার রাজদরবারের শ্রেষ্ঠ বাইজি হিসেবে। অনেক দিন রাজদরবারের শ্রেষ্ঠ বাইজির পদে আসীন থাকলেও তাঁর বয়স যখন ৪০-৪২ বছর তখন ত্রিপুরার তৎকালীন মহারাজা নূরজাহানকে অবসরে পাঠিয়ে দেন এবং মাঝিগাছায় কয়েক একর জমি দান করেন। এ ছাড়া সঙ্গে দিয়ে দেন বেশ কিছু নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার। নূরজাহান আবার মাঝিগাছা গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং নিজেকে জমিদারের বিধবা স্ত্রী হিসেবে প্রচার করেন।

নূরজাহান গ্রামের গরিব মানুষকে নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। কিন্তু সব সময় অতীত জীবনের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনায় ভুগতেন। ভাবতেন পাপে ভরা তাঁর জীবন। কিভাবে মুক্তি মিলবে এ পাপ থেকে। একদিন শরণাপন্ন হন এক মাওলানা সাহেবের, তিনি তাঁকে একটি মসজিদ নির্মাণের পরামর্শ দেন। মাওলানা সাহেব বলেন, এতে আল্লাহ হয়তো বা ক্ষমা করে দিতে পারেন। সেই পরামর্শ মোতাবেক নূরজাহান মসজিদ নির্মাণের জন্য গ্রামের লোকদের সহযোগিতা চাইলেন। এতে এলাকাবাসী খুশি হলো। নূরজাহান জমি ও অর্থ দান করলেন। যথাসময় শুরু হলো মসজিদ নির্মাণের কাজ এবং সময়মতো তা শেষও হলো। ধার্য করা হলো মসজিদে প্রথম নামাজ পড়ার দিন। ওই নামাজে ইমামতি করবেন মসজিদ নির্মাণে পরামর্শ দানকারী সেই মাওলানা সাহেব এবং সম্পন্ন হলো দাওয়াত কার্যক্রম।

যথাসময়ে এলাকাবাসী ও ইমাম উপস্থিত হলেন মসজিদ প্রাঙ্গণে। উপস্থিত এলাকাবাসীর উদ্দেশে মাওলানা সাহেব কিছু বক্তব্য দিলেন। সেই বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করলেন, নূরজাহানের অতীত জীবনের কথা, অতঃপর মসজিদ নির্মাণের ঘটনা। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সব মুসল্লি বলে উঠলেন, আমরা এ মসজিদে নামাজ পড়ব না, এটি নটীর মসজিদ। সবাই নামাজ না পড়ে চলে গেলেন। সেই থেকে আর কোনো দিন এ মসজিদে হয়নি আজান, হয়নি কোনো নামাজ, উচ্চারিত হয়নি আল্লাহু আকবার ধ্বনি।

সেই থেকে এলাকার লোকজন মসজিদটিকে নটীর মসজিদ বা বাইজি মসজিদ হিসেবে ডাকে। মসজিদটি নিয়ে নানা রকম কথা প্রচলিত থাকলেও মসজিদটি যে একজন বাইজির উপার্জিত অর্থে নির্মিত, এতে কারো সন্দেহ নেই। সেই থেকে নূরজাহান কাটিয়েছেন একাকিত্ব জীবন। আবার কারো মতে অপমানে আত্মহত্যা করেছিলেন এবং তাঁর নির্মিত মসজিদের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। সেই থেকেই মসজিদের পশ্চিম দিকের কিছু অংশ আজও ব্যবহৃত হচ্ছে কবরস্থান হিসেবে। প্রায় ২৫০ বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই নটীর মসজিদ বা বাইজি মসজিদ।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা