• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

রামপাল-মোংলা সড়কের বেহাল দশা, ঘটছে দুর্ঘটনা

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বাগেরহাটের দশানী-রামপাল-মোংলা সড়কের বেহাল অবস্থা। ছোট-বড় খানা-খন্দে ভরে গেছে এ সড়ক। একটু বৃষ্টি হলেও গর্তগুলোতে পানি জমে থাকে। এ অবস্থার মধ্যে দিয়েই চলাচল করতে হয় এ সড়ক ব্যবহারকারীদের। ফলে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই জনসাধারণের।

খানা-খন্দ, ভাঙা-চোরা ও আচমকা মোড়ের কারণে এ সড়কে প্রতিদিনই ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা। বাধ্য হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় পিচঢালা সড়ক যেন গ্রামের মেঠোপথ হয়ে গেছে। অনেক জায়গা চলাচলের উপযোগী করতে ইটের সলিংও দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে বাগেরহাট সড়ক বিভাগ বলছে সড়কটির প্রস্থ সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পাস হলেই কাজ শুরু হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, বাগেরহাট শহরের দশানী থেকে শুরু হয়ে সড়কটি মোংলাতে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা রয়েছে। কিন্তু সড়কের এমন বেহাল অবস্থা যে হেঁটে চলাও দায়। যত্রতত্র খানা-খন্দ আর সড়কের উপরে পাথরের খণ্ড থাকায় উল্টে পড়ে রিকশা-ভ্যানের মত ছোট গাড়ি। রাস্তার জীর্ণ দশার কারণে যানবাহনের পেছনেও ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ।
এছাড়া আচমকা মোড়ের কারণেও হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। নিজেদের দুর্ভোগ কমাতে সড়কের অনেক জায়গায় ইট বিছিয়েও দিয়েছে স্থানীয়রা। দ্রুত এ সড়ক সংস্কার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য অনেকের।

এ সড়ক দিয়ে চলার সময় দুর্ঘটনার শিকার মিহিনা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে অটোরিকশায় করে ফিরছিলাম। সামনের দিক থেকে আসা একটি ভ্যানকে জায়গা দিতে গেলে সড়কের ভাঙা অংশে চাকা পড়ে উল্টে যায় আমাদের অটোরিকশা। এসময় আহত হই আমিসহ অটোর ৬ যাত্রী।

মোটরসাইকেল চালক রানা বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তায় রয়েছে অসংখ্য পাথরের টুকরো। তার উপর চাকা উঠলেই মোটরসাইকেল পিছলে যায়। সামনে তাকাবো না নিচে দেখবো। এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে পড়ি দুর্ঘটনায়।

কয়েকজন অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যানচালক বলেন, আমরা গরীব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। রাস্তার কারণে গাড়ির পেছনে যত খরচ হয় তাতে আমাদের পরিবার নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়াই কঠিন। সরকারের কাছে দ্রুত এই সড়ক সংস্কারের দাবি আমাদের।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন বলে, বাড়ি থেকে বিদ্যালয় মাত্র এক কিলোমিটার দূরে হওয়ায় হেঁটেই যাতায়াত করি। কিন্তু রাস্তা দিয়ে ঠিকমত হাঁটাই যায় না। আর বর্ষার সময় তো পানি, কাদা মেখে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।

কাড়াপাড়া কাদম্বিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা বাধন বলেন, মূল সড়কের পাশেই বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বাচ্চারা খুব-ই ঝুঁকির মধ্যে আসা-যাওয়া করে। আমরাও ভয়ে থাকি কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে, উপরন্তু বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় কোনো স্পিডব্রেকার না থাকায় মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা।

সড়কের পাশে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, রাস্তাটি যদি সংস্কার করা না হয়, তবে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনাও ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাই।
এছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মোংলা, রামপাল, ফয়লাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য আমরা এই সড়কটি ব্যবহার করি। কিন্তু সারা বছর সড়কটির এমন বেহালদশা থাকে যে বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই আঁতকে উঠি। বৃষ্টির মৌসুমে সড়কের অর্ধশতাধিক জায়গায় পানি জমে থাকে। শুকনো মৌসুমেও কয়েক জায়গায় পানি থাকে। এখন শুকনো মৌসুমে যদি রাস্তা সংস্কার না করা হয় তাহলে বৃষ্টির মৌসুম এলে সড়কটি আর সংস্কার সম্ভব হবে না। সেসময় জনভোগান্তি আরও বাড়বে।

সড়ক ও জনপথ বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, দশানী থেকে মোংলা পর্যন্ত ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। বর্তমানে সড়কটির মাত্র ৬ কিলোমিটার জায়গার প্রস্থ ১৮ ফুট রয়েছে। অবশিষ্ট ২৭ কিলোমিটার সড়ককে ১৮ ফুটে উন্নীতকরণ ও পুরো সড়ক সংস্কারের জন্য ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটা পাস হলে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করব। এছাড়া সাময়িকভাবে সড়কটিকে সচল রাখতে মেরামতের জন্য আমরা দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নির্বাচন করেছি। মার্চের মধ্যে সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবন ভাঙাচোরা এলাকা সংস্কার করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা