• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বাড়িতে ঢুকে পড়ল বাঘ!

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩  

ভারতের উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটের বাসিন্দা জসবিন্দর সিং দুধের ব্যবসায়ী। পিলিভিট ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে আনুমানিক ১২ কিলোমিটার দূরে তাদের গ্রাম। তাই আসা যাওয়ার পথে দূর থেকে বাঘের দেখা মেলাটা তার কাছে খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। যেটা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি সেটা হলো। বাঘ তার বাড়ির প্রাচীরের ওপর ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দিল।

জসবিন্দর সিং বলেন, আমি ভাবিনি ২৫ ডিসেম্বরের রাতটা এইভাবে কাটবে। রাত সাড়ে ১২ বা ১টা হবে। ঘরের বাইরে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা আওয়াজে দেখি বাড়ির পাঁচিলে বড়সড় কিছু একটা বসে আছে। প্রথমে বুঝিনি, তারপর ঘরের বাইরে বেরিয়ে দেখি আরে! এটা তো একটা বাঘ। পরে অবশ্য জেনেছিলাম সেটা বাঘিনী।

ঘটনাটা পিলিভিটের আটকোনা গ্রামের। ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের জন্য পরিচিত পিলিভিট এখন খবরের শিরোনামে। কারণ বছর দুই-আড়াইয়ের এক বাঘিনী উপস্থিত হয় প্রথমে জসবিন্দর সিংয়ের বাড়ির প্রাচীরে ও পরে তার ভাই সুখবিন্দর সিংয়ের বাড়ি।

প্রায় ঘণ্টা বারো সেই গ্রামকেই আস্তানা করেছিল সে। আটকোনা গ্রামে আসা সেই অতিথিকে দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকে জড়ো হয় কয়েক হাজার মানুষ। মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় পিলিভিটের সেই ছবি।

জনতার উৎসাহ ছিল ঘুমন্ত বাঘিনীকে ঘিরে, যদিও বাঘিনী আশপাশে জড়ো হওয়া উৎসাহী জনতাকে নিয়ে খুব একটা ভাবিত ছিল না।

পরে বন দফতরের কর্মকর্তারা পরে তাকে উদ্ধার করে। পিলভিট ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ডিরেক্টর নবীন খন্ডেলওয়াল বলেন, 'আমরা ভোরের দিকে খবরটা পাই। সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। যেহেতু বাঘটি লোকালয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে ছিল, তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পরে নিয়ম মেনে তাকে ট্র্যাঙ্কুইলাইজারের সাহায্যে ঘুম পাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত তার চিকিৎসা চলবে এবং পরে তাকে সংরক্ষিত এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।'

জসবিন্দর বলেন, খুব চিন্তা হচ্ছিল। ভাগিস্য বাড়িতে খুব বেশি লোক ছিল না। পুলিশ, বনবিভাগ সবাইকে ক্রমাগত ফোন করছিলাম। তাদের ফোন করে বললাম আমার বাড়ির পাঁচিলে বাঘ ঘুমাচ্ছে। হাতের কাছে যা ছিল সেটা ছুঁড়তে থাকি। কিন্তু ভয়ও হচ্ছিল যদি ভয় পেয়ে বাঘটা পালানোর সময় কাউকে আক্রমণ করে।

ভয় পেয়ে পালানোর সময় একটি কুকুর এসে পড়ে ওই বাঘিনীর সামনে। জসবিন্দর প্রথমে সেই কুকুরটিকে বাঁচান আর তারপরে ধাওয়া করেন তাদের গ্রামের নতুন অতিথিকে। ততক্ষণে অবশ্য সে ঢুকে পড়েছে জসবিন্দরের ভাই সুখবিন্দর সিংয়ের বাড়িতে।

রাতটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে তাদের। সুখবিন্দর সিং বলেন, 'কী করব বুঝতে পারছিলাম না। বাড়িতে বয়স্ক মা, বাবা রয়েছেন। কিছু না পেয়ে হাতের কাছে যা ছিল সেটা প্রথমে ছুঁড়ে মারলাম। ভয় পেয়ে বাঘটা গিয়ে বসল আমাদের পাঁচিলে।  আমাদের গ্রামের বাড়িগুলোর পাঁচিল সব একটার সঙ্গে অন্যটা প্রায় জোড়া। তাই আবারও তাড়া করলে যদি অন্য কারও বাড়িতে গিয়ে ঢোকে সেই আশঙ্কায় কিছু করতেও পারছিলাম না।

বাঘটিকে অবশ্য ওইদিন সন্ধ্যাবেলা দেখেছিলেন সুখবিন্দরের ভাইপো সুখদীপ। তার কথায়, 'সন্ধ্যেবেলা ক্ষেতে কাজ শেষ করে ফেরার সময় প্রথমে ওই বাঘিনীকে এক ঝলক দেখেছিলাম আমি। তখনও ভাবতে পারিনি রাত্তিরে সেটাই উদয় হবে আমাদের বাড়িতে! পরে বাড়িতে সে কথা বলায় মা খুব বকেছিলেন। আমি গ্রামের এক-দুজনকে সাবধান করেছিলাম, যারা ওই রাস্তা দিয়ে গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে বলিনি, চিন্তা করবেন তাই।

ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গ্রামবাসীদের বেশিরভাগই জেনে যান তাদের নতুন অতিথির বিষয়ে। একে একে সবাই তারা জড়ো হন জসবিন্দরের বাড়ির কাছে। সুখদীপ সিং বলেন, বাড়ির সামনে আগুন জ্বালানো হয়। লাঠি হাতে আমরা ঠিক করি রাত জেগে পাহারা দেব সবাই। বাঘিনীটাকে পালাতে দিলে আবার অন্য কোনওদিন হানা দেবে। ইতিমধ্যে পুলিশও চলে আসে। তবে বন দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন ভোরের আগে আসা সম্ভব নয়। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল কখন ভোর হবে। আগে কখনো এত দীর্ঘ কোনো রাত মনে হয়নি।

সকাল হতেই আশপাশের গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন বাঘিনীকে দেখতে। প্রাচীরে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা যায় তাকে।

প্রথমে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় জায়গাটা। খাঁচা নিয়ে আসা হয়। বন দফতরের কর্মী ছাড়াও পশু চিকিৎসকরাও উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বন দফতরের কর্মীরা বাঘিনীটিকে আয়ত্তে আনেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যঘ্রপ্রকল্প কেন্দ্রের পশু হাসপাতালে।

আটকোনা বা তার আশপাশের অঞ্চলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বা চিতা বাঘের আনাগোনা নতুন নয়। সুখদীপ সিং-সহ ওই গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, আশপাশের অঞ্চলে বাঘ তারা আগেও দেখেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরে এ জাতীয় ঘটনা বেড়েছে।

এ বিষয়ে ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (হিউম্যান-ওয়াইল্ডলাইফ কনফ্লিক্ট ডিভিশন) প্রধান ড. অভিষেক ঘোষাল বলেন, তরাই অঞ্চলে লোকালয়ে বাঘ চলে আসাটা নতুন নয়। ওই অঞ্চলে লোকালয়ে বাঘ চলে আসার একাধিক কারণ হতে পারে। যেমন বাঘ যদি অসুস্থ বা সন্তানসম্ভবা হয়, অথবা সে বুড়ো হয়ে গিয়েছে, শিকার ধরে পারে না। বনে লাইভ স্টক কমে আসাটাও বাঘ লোকালয়ে চলে আসার অন্যতম কারণ। আসলে ওরা ঘন গাছপালা যুক্ত জায়গা পছন্দ করে। আর বাঘের কাছে আখের ক্ষেত আর বনের মধ্যে খুব একটা তফাত নেই। সে কারণেও চলে আসতে পারে।

তিনি জানান, বাঘ মানেই যে নরখাদক এটা ভাবা ভুল। বাঘ মানুষকে আক্রমণ করে তাকে খেয়েছে এমন ঘটনা বিশেষ একটা দেখা যায় না। তারা আক্রমণ করে ভয় থেকে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা