• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে পথ চলি : প্রধানমন্ত্রী

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০১৯  

সব ধর্মাবলম্বীর জন্য যথাযথ মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিয়ে দেশে উৎসব উদ্যাপনের সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে তাঁর সরকার সমর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। তিনি বলেন, ‘আমাদের উৎসবগুলোতে সবাই আমরা এক হয়ে উদ্যাপন করি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা অর্জন। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার বিকেলে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমীর দিনে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময়কালে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি ওই সময় দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলে আমরা এক হয়ে পথ চলি।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের ধর্মকে আমরা সম্মান করি এবং আমরা চাই আমাদের দেশে শান্তি বজায় থাকুক। এ দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি—এ ধরনের যেসব ব্যাধি সমাজকে নষ্ট করে, দেশকে নষ্ট করে, পরিবারকে নষ্ট করে, পারিবারিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে, তা যেন না থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে শান্তি বজায় থাকবে। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশের উন্নতি হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে—এটাই আমরা চাই।’

বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে চমৎকার একটা পরিবেশ যে আমাদের ঈদের জামাত যখন অনুষ্ঠিত হয়, তখন আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবসমাজ সেখানে কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। আবার যখন পূজা-পার্বন হয়, আমাদের মুসলমান সমাজের যুবকরা সেখানে উপস্থিত থাকে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘একটা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ যে আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে সব ধর্মের মূলকথা—শান্তি ও মানবতা। এই শান্তি এবং মানবতার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এভাবে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এ দেশের সব ধর্মের মানুষ—হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বুকের রক্ত বিলিয়ে দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী এবং রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও হেড অব মিশন স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

এর আগে রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার প্রধান স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ। তিনি সেখানে পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে যান এবং সেখানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যদি সহনশীলতা থাকে এবং একে অপরের প্রতি সম্মান এবং সহানুভূতি থাকে সেটাই একটি দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে এবং একটি দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা, আপনজন হারানোর শোক-ব্যথা বুকে নিয়েও দিন-রাত পরিশ্রম করেছি, শুধু একটা কথা চিন্তা করেছি, এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে, দেশের মানুষের ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে বলেই আপনারা দেখছেন প্রতিনিয়ত পূজামণ্ডপের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।’ তিনি এ সময় পূজায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করেন। তিনি কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে পূজার আয়োজন না করে প্রতিষ্ঠিত পূজামণ্ডপগুলোতেই পূজা অনুষ্ঠানের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে পূজামণ্ডপগুলো রয়েছে সেখানেই সবাই যদি সম্মিলিতভাব পূজাগুলো করে তাহলে এর নিরাপত্তা দেওয়াটা আরো সহজ হয়ে যায়। আর সুন্দর পরিবেশটাও আমরা সৃষ্টি করতে পারি। যেটা আমি পূজা কমিটিকে সব সময়ই বলি।’ তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যখন পূজা করেন তখন বাংলাদেশের জন্যও দোয়া করবেন, যাতে দেশের সকল মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে, সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে থাকতে পারে। সকল ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলেরই যেন মঙ্গল হয়, উন্নত জীবন হয়, দারিদ্র্যের হাত থেকে সকলেই যেন মুক্তি পেয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারে। আমাদের দেশ নিয়ে বিশ্বে আজকে আমরা যে গর্ব করে যাচ্ছি সে গর্ব যেন করে যেতে পারি।’

মহানগর সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি শৈলেন মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা