• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

সুশাসন নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯  

উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের স্বার্থে সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতন্ত্র আর উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ সব বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল বুধবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হেইল আর ইউএসএআইডির প্রশাসক মার্ক গ্রিন অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সুশাসন, উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় অনুযায়ী গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হেইলের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করেন শহীদুল হক। এ ছাড়া ওই দিন সকালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (ইউএসএআইডি) প্রশাসক মার্ক গ্রিনের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রসচিব।

প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্রসচিব যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।

মার্ক গ্রিন তাঁর টুইটে শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। মার্ক গ্রিন লিখেছেন, রাখাইন সংকট, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আর জুলহাজ মান্নান হত্যার প্রসঙ্গগুলো আলোচনায় এসেছে।

ওই বৈঠক প্রসঙ্গে ইউএসএআইডির বিজ্ঞপ্তি মার্ক গ্রিন তাঁর টুইটে জুড়ে দিয়েছেন। শহীদুল হকের সঙ্গে আলোচনায় ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন মার্ক গ্রিন। বিশেষ করে হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন আর সহিংসতা, যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন সম্পর্কে মার্ক গ্রিন মার্কিন উদ্বেগ তুলে ধরেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষার উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনবান্ধব শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা আর শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে, সেটার ওপর জোর দিয়েছেন মার্ক গ্রিন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল হক গতকাল ওয়াশিংটন থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স”সহ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বাংলাদেশের মহান বন্ধু ও উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে এখনকার সম্পর্ককে বহুমাত্রিক করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও নিবিড় করার বিষয়ে আমাদের বার্তা মার্কিন কর্মকর্তারা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন।’

নির্বাচনের পরপরই পররাষ্ট্রসচিব মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। সংগত কারণেই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন, সুশাসন নিয়ে সরকারের ভাবনার মতো বিষয়গুলো তুলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে ঢাকায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, ‘ওয়াশিংটনে দুই দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকে কী নিয়ে কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমি এখনো কিছু শুনিনি। তবে বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রশ্ন আছে। আবার সুশাসনের বিষয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান বেশ শক্ত। কাজেই দুই দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র খুব সংগত কারণেই বিষয়গুলো তুলেছে বলে ধারণা করি।’

জানা গেছে, নির্বাচন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। নির্বাচনী অনিয়মের যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো সুরাহার সুযোগ আছে বলেও তিনি মার্কিন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ওপর জোর দিচ্ছে। তাই সুশাসন নিয়ে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রসচিব।

ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুয়ামূন কবীর গতকাল দুপুরে বলেন, ‘রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্কের অন্য বিষয়গুলোর পাশাপাশি রাজনীতির বিষয়গুলো সংগত কারণেই আসবে। তা ছাড়া তাঁদের বৈঠকটি হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই। কাজেই সরকারের পরিকল্পনা কী, সেটা মার্কিন প্রশাসনকে জানানোর সুযোগ পেয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব। আবার যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের ক্ষেত্রগুলো কী কী, কীভাবে সহযোগিতাটা এগিয়ে নেওয়া যায়, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া গেছে। এখন আমাদের অপেক্ষার পালা, সুশাসন ও উন্নয়ন এগিয়ে নিতে একে অন্যকে কীভাবে সাহায্য করবে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় অনুযায়ী, বুধবার কোনো এক সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপসহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিসা কার্টিসের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের। দক্ষিণ এশিয়ায় কাজ করার অভিজ্ঞতাপুষ্ট লিসা কার্টিসের সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক প্রসঙ্গগুলো বড় পরিসরে আসতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত বছরের মার্চে ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক বাংলাদেশ সফরে এসে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তোলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এ প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সফরের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রসচিব মুখ্য উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক বিভাগের প্রধান মাইকেল কোজাক, ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী ক্যারোল থমসন ও’কনেল, বিশেষ দূত জন কটন রিজমন্ড এবং নাথান সেলসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীরতর করা এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে পররাষ্ট্রসচিবকে আশ্বস্ত করেছেন। বাণিজ্য, জ্বালানি, রোহিঙ্গা, অভিবাসন এবং অন্য বিষয় নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করে মার্কিন নাগরিকেরা বিশেষ সুবিধা নেন—সে প্রসঙ্গটি তুলেছেন শহীদুল হক।

দুই পক্ষের আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যার প্রসঙ্গটিও গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশ আলোচনায় বলা হয়েছে, উত্তর রাখাইনের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে ভয়াবহ এ সমস্যা সৃষ্টি এবং দিন দিন তা আরও জটিল আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে যেতে পারে, মিয়ানমার সরকারকেই সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।

সরকারের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্র
বাসস জানায়, দুর্নীতি নির্মূল, সন্ত্রাস দমন ও মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশ সরকারের এই প্রশংসা করা হয়।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা