• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২১  

ছোটদের বড়দের সকলের, গরীবের নিঃস্বের ফকিরের,
আমার এ দেশ সব মানুষের------
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রটি ছিল মুক্তিকামী বাঙালির অনুপ্রেরণার উৎস। ইথরে ভেসেআসা শব্দগুলি যেন বুলেটের চেয়েও প্রচন্ড শক্তি নিয়ে শত্র“র শিবিরে আঘাত হানতে পারে তার প্রমান হলো বিপ্লবী এই “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র”। 
সেদিন ইয়াহিয়া খানের বেতৃত্বে টিক্কা-নিয়াজী-রাওফরমান আলীর মত পরাশক্তিরা বুলেট-বেয়োনেট দিয়ে বাংলার মুক্তিকামী জনতাকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। তাদের  জুলুম নির্যাতকে রুখে দিতেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হাতিয়ারের চেয়ে শক্তিশালী আঘাত হেনেছিল পাক-হানাদার শিবিরে। বেতারটি দিক নির্দেশনা দিয়ে স¦াধীনতার অনুপ্রেরনা যুগিয়েছিল। যুদ্ধমাঠে সশস্ত্র যুদ্ধে শত্র“ পক্ষকে আত্রমণ করেছিল এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীগণ। সবাই প্রিয় দেশকে স্বাধীন করার লক্ষে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। তাদের এ অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।  
আজ ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের এই সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য সময়টুকু ছিল অস্থির আর উদ্বেগের। এই দিনে জাতিসংঘে চলে চরম উত্তেজনা। কারণ পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করা। যার ফলে পাকিস্তানী বাহিনী অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করার সুযোগ পাবে। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাবি করে যে, “এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।” 
উলে­খ্য, জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে জাতিসংঘে উপস্থাপন করার জন্য পাকিস্তান বিমানবাহিনী ’৭১ এর ৩ ডিসেম্বর ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিমান হামলা চালায় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই তারিখে রাতের বেলা ভারত পাকিস্তানের উপর হামলা চালায়।
এমনই উৎকন্ঠাময় অবস্থা তখন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ লিখিত একপত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহŸান জানান।
অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস করানো জন্য যুক্তরাষ্ট্র তখন বৈঠকের পর বৈঠক করছে। সবাই যখন চরম উদ্বেগ আর চিন্তার মধ্যে ছিলেন তখন আসলো খুশির সংবাদ। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রদানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেস্তে যায়। পোল্যান্ডও এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। তবে আরো একটি আনন্দের সংবাদ ছিল যে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল।
এই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র যখন হেরে গিয়েছিল তখন পক্ষান্তরে পাকিস্তানের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁডায়। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনী যৌথভাবে তীব্র আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর আমীর আবুল আলা মওদুদী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে জানান যে, “প্রতিটি দেশপ্রেমিক মুসলমান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাথে রয়েছে।”
মুক্তিযুদ্ধের এইদিনে ল²ীপুর হানাদার মুক্ত হয়। যুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস বাহিনীর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনায় ল²ীপুর ছিল বিপর্যস্ত।
একাত্তরের এই দিনে ৩নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা শমশেরনগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করেন। ৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন মেহেরপুর। এছাড়া ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে কামালপুর নিজেদের আয়ত্তে আনেন।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা