• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

এ বছরের শেষ নাগাদ চালু হতে পারে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২২  

প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ কেন্দ্রটি চালু হতে পারে। প্রকল্পের প্রথম ইউনিট চালুর জন্য এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে তিন লাখ টন কয়লা কেনা হয়েছে। কমিশনিং তারিখ নির্ধারণ করা হলে এ কয়লা দেশে আনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, গত মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন পর্যায়ের টেস্টিং কাজ চলছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ ও পরিচালনায় গঠিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর জন্য ভারতীয় নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে শাটডাউন নোটিস চাওয়া হবে। তাদের দিক থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেশে কয়লা আমদানির নির্দেশনা দেয়া হবে।

বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ আকরাম উল্লাহ গণমাধ্যেমকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর বিষয়ে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে শাটডাউনের বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। হয়তো চলতি মাসের মাঝামাঝি তা শেষ হবে। এরপর আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কয়লা আমদানির বিষয়ে শিপমেন্ট চূড়ান্ত করব। আশা করছি এ কয়লা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে এলে আগামী নভেম্বর নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কমিশনিং করা যাবে।

এর আগে, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে কয়েক দফা সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করা যায়নি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রকল্পে ধীরগতি নেমে এলে বাস্তবায়ন আরো বিলম্বিত হয়। গত এপ্রিলের বিদ্যুৎ বিভাগের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর জন্য নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান নতুন করে উৎপাদন সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) চলতি বছরের জুলাই এবং দ্বিতীয় ইউনিট নভেম্বর নাগাদ উৎপাদন সময়সীমা নির্ধারণ করার কথা বলে। যদিও এ প্রস্তাবের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এখনো কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে আসেনি।

বিআইএফপিসিএল বলছে, এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ। বাকি কাজ মাসখানেকের মধ্যেই শেষ হবে। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তিন লাখ টন কয়লা কিনেছে বিআইএফপিসিএল। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার নির্ধারিত তারিখ সাপেক্ষে তা দেশে আনা হবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি চুক্তি এখনো হয়নি। কয়লার বৈশ্বিক দর ঊর্ধ্বমুখী থাকায় স্বল্পমেয়াদে কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। দর কমলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পের কয়লা হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া প্রস্তুত হলে কয়লা সরবরাহ চালু হবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে কয়লা চুক্তি বাতিল করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করার প্রক্রিয়া চলছে।

রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে আমদানির জন্য ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লাকে চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। সাশ্রয়ী বিবেচনায় এই তিন দেশের যেকোনো একটি দেশ থেকে দীর্ঘমেয়াদি কয়লা আমদানি চুক্তি করার কথা ভাবছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড লাইনে সংযুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে সঞ্চালন লাইন দরকার সেটি এখনো প্রস্তুত করতে পারেনি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলেও এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা শুরুতে রামপালের বিদ্যুৎ খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করব। এর মধ্যে গ্রিড লাইন প্রস্তুত হলে এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করে সারা দেশে সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ বিনিয়োগে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) যৌথ কোম্পানি গঠন করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু সুন্দরবনের কাছাকাছি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ হওয়ায় পরিবেশবাদীসহ বিভিন্ন সংগঠন শুরু থেকেই এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা