• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

চলতি বছরে শরণখোলা রেঞ্জেই ৯ টি বাঘের উপস্থিতি

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

শরণখোলা  টানা তিন মাস সুন্দরবনে বনজীবী ও পর্যটকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার পর বনের নদী ও খালে হঠাৎ করেই বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘটনায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য ইতিবাচক প্রভাবের দাবী করছে বন বিভাগ। মাত্র একদিনের ব্যবধানে সুন্দরবন শরণখোলা রেঞ্জের ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্টে কমপক্ষে তিনটি বাঘের নদী সাতরানোর দৃশ্য চোখে পড়ে টহলরত বনরক্ষী ও পর্যটকদের। উচ্ছ্বসিত বনরক্ষী ও পর্যটকরা বাঘের নদী সাঁতরানোর এসব দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেছেন। যা গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জায়গা দখল করে আছে।
এনিয়ে চলতি বছরে শুধু শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে বনরক্ষী ও পর্যটকদের ৯টি বাঘ চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ ও ভিডিও ধারনের সুযোগ হয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, রবিবার (৩ সেপ্টম্বর) সকাল ৭টার দিকে খুলনা থেকে আসা ‘এমভি ক্রাউন’ নামে পর্যটকবাহী জাহাজ পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার রেঞ্জের কটকা টাওয়ারের খালে প্রবেশ করলে একটি বাঘ সাঁতরে নদী পার হতে দেখেন পর্যটকরা। আগেরদিন শনিবার সকাল ৮টার দিকে ‘এমভি বন সাম্পান’ নামে অপর একটি পর্যটকবাহী জাহাজের পর্যটকরা কচিখালী নদীতে আরো একটি বাঘরে সাঁতরে যাওয়ার বিরল দৃশ্য উপভোগ করেন।
এছাড়া, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বনরক্ষীরা নিয়মিত টহলকালে শরণখোলা রেঞ্জ অফিস এবং আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের মধ্যবর্তী এলাকার বনে আরো একটি বাঘের দেখা পান। পৃথক তিনটি স্থানে দেখা বাঘের এই দৃশ্য মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা। এনিয়ে চলতি বছরে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন স্থানে চতুর্থবারের মতো মিলেছে বাঘের দেখা। এর আগে গত ৮ আগস্ট সকালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের অফিসের সামনে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পান বনরক্ষীরা। বিশাল রয়েল বেঙ্গল টাইগারটি বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে। এসময় মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন এক বনরক্ষী। এছাড়া, গত ৩ ফেব্রয়ারি (২০২৩) দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি অফিসের পুকুর পাড়ে দেখা মেলে জোড়া বাঘের। একদিন-একরাত (প্রায় ২২ ঘন্টা) সেখানে অবস্থান করে বাঘ দুটি আবার বনে ফিরে যায়। ২৪ ফেব্রয়ারি কটকা এলাকায় তিনটি বাঘ দেখতে পান বনরক্ষীরা।
শরণখোলা রেঞ্জের কটকা পর্যটন স্পট ও অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুরজিৎ চৌধুরী প্রত্যক্ষদর্শী পর্যটকদের বরাত দিয়ে জানান, রবিবার সকাল ৭টার দিকে ‘এমভি ক্রাউন’ নামে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ কটকা টাওয়ারের খালে ঢোকার সময় একটি বাঘ দেখতে পান। বাঘটি সাঁতরে খাল পাড় হচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে উল্লাস প্রকাশ করেন পর্যটকরা। এসময় মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন তারা। খুলনার পপুলার ট্যুরস এন্ড ট্রেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ জামাল খান পপলু জানান, তাদের পর্যটকবাহী ‘বন সাম্পান’ জাহাজ সকাল ৮টার দিকে কটকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। জাহাজটি সুপতি এলাকা আতিক্রম করার সময় একটি বাঘ সাঁতরে নদী পার হতে দেখে “বাঘ, বাঘ” বলে উল্লাস করতে থাকেন পর্যটকরা। এসময় তারা বাঘের সাঁতারের দৃশ্য মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারন করেন। বন সাম্পান জাহাজে পর্যটক হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. মনিরুল ইসলাম। তার বরাদ দিয়ে শাহ জামাল পপলু জানান, তারা যে বাঘটি দেখতে পান সেটি ছিল একটি বাঘিনী।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কোলাহলমুক্ত থাকায় বাঘসহ বন্যপ্রাণিরা নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। যার প্রমান হিসেবে প্রথমবার বনে প্রবেশ করেই বাঘের দেখা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। পর্যটকবাহী জাহাজ এম ভি ক্রাউন ও বন সাম্পানের পর্যটক এবং বনরক্ষীরা পৃথক পৃথক স্থানে তিনটি বাঘ দেখেছেন।
এসিএফ মাহবুব হাসান আরো বলেন, বন বিভাগের কঠোর নজরদারীতে বন অপরাধ কমে যাওয়ায় বাঘ, হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকরা সুন্দরবনে অহরহ বাঘের দেখা পাবেন বলে তার অভিমত।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা