• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

২ হাজার কোটি টাকার কর সুবিধা পাচ্ছে রপ্তানি খাত

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০১৯  

সব ধরনের রপ্তানির উেস কর বিদ্যমান ১ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এনবিআরের আয়কর বিভাগ প্রাথমিকভাবে হিসাব করে দেখেছে, এতে সম্ভাব্য রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাত্ রপ্তানিকারকরা এই পরিমাণ অর্থ কর ছাড় পেতে যাচ্ছেন। মূলত গার্মেন্টস খাতসহ রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এর আগে গত বাজেটে রপ্তানির নগদ প্রণোদনা এক শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসহ শিল্প খাতের জন্য কিছু শুল্ক ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রপ্তানির বিপরীতে আয়কর কমিয়ে বিদ্যমান এক শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হচ্ছে। এ বিষয়ে বুধবার নাগাদ এসআরও (আদেশ) জারি হতে পারে। এ লক্ষ্যে আয়কর বিভাগ প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করেছে। আদেশ জারি হওয়ার দিন থেকে এটি কার্যকর হবে। তিনি বলেন, এর ফলে বড়ো ধরনের রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার বিবেচনায় এতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কমবে। মাত্রাতিরিক্ত রাজস্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কায় অর্ধেক কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু কার্যত শেষ পর্যন্ত নামিয়ে আনা হচ্ছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।

গত কয়েক অর্থবছর থেকেই রপ্তানির উেস আয়কর নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কর এক শতাংশ হলেও তা এসআরওর মাধ্যমে এক বছরের জন্য কমানো হয়। এরপর বাজেটে কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় তা যথারীতি এক শতাংশে চলে যায়। এর পর ফের দেনদরবার শুরু হলে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য এসআরও জারির বিষয়টি এখন অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।

তবে অর্থনীতিবিদরা ঢালাও কর ছাড়ের বদলে এ খাতের হিসাব ও আয়কর আদায়ে শৃঙ্খলা আনার পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় রপ্তানিকারকদের আয় হোক বা না হোক সমহারে কর দিতে হচ্ছে। অথচ উচিত হলো, যারা আয় করবে, তাদের ওপর আয়কর আরোপ করা। সবার আয় নিশ্চয়ই সমান হারে হয় না। এ বিষয়ে শৃঙ্খলা আনা দরকার। এভাবে ঢালাও করহার না কমিয়ে মুদ্রার বিনিময় হার বা অন্য কোনো উপায়ে সহযোগিতা করা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূলত রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবৃদ্ধি হয়নি। উলটো কমে গেছে প্রায় তিন শতাংশ।

গার্মেন্টস-শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, গত অর্থবছর গার্মেন্টস খাতের প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তা অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এ খারাপ অবস্থা আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। আমাদের রপ্তানি আদেশ অন্য দেশে চলে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমাদের উত্পাদন ব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রা অবমূল্যায়নের কারণে তারা আমাদের চাইতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় এগিয়ে গেছে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা দরকার।

গত অর্থবছর বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করেছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলে এক শতাংশ হিসেবে কর আসার কথা ৪৪ কোটি ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। অর্থবছরের গত তিন মাসে এক শতাংশ হিসেবে আদায় হয়েছে। বাদবাকি সময়ে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হিসেবে কর আদায় করা হবে।

রপ্তানি পণ্যের মূল্যের ওপর লাভ-লোকসান যা-ই হোক, সরকার উেস কর ২৫ পয়সা হিসেবে কেটে থাকে। এটি উেস কর হিসেবে পরিচিত। তবে পরবর্তীতে প্রকৃত মুনাফা কিংবা লোকসানের ওপর যথাযথ কর প্রযোজ্য হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। রপ্তানিকারকরা এসব ঝামেলা এড়াতে পরিশোধিত উেস কর হিসেবেই সাধারণত তাদের মুনাফা দেখিয়ে থাকেন। এতে কারো লোকসান হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুনাফা দেখান। অন্যদিকে পরিশোধিত করের চেয়েও অনেক রপ্তানিকারকই বেশি হারে মুনাফা করলেও তিনি বাড়তি কর দেন না। ফলে ঐ অর্থ অপ্রদর্শিত হিসেবে থেকে যায়।

 

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা