ভারতকে চাঁদ-মঙ্গলে পৌঁছে দেন দরিদ্র গ্রামের ছেলেটি
ষাট গম্বুজ টাইমস
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০১৯
ড. মিলস্বামী আন্নাদুরাই। ভারতের প্রথম সারির একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী তিনি। মঙ্গল আর চন্দ্রাভিযানে ভারতের সফলতার পেছনে অবদান রয়েছে তার। অন্য ১০ জনের মতো শিক্ষার সুযোগ ছিল না তার।
কখনও গাছের তলায়, কখনও মন্দিরের বারান্দায় আবার কখনও গোয়াল ঘরে ক্লাস করেছেন তিনি। শিক্ষাজীবনের প্রথম তিন বছরের এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘ক্লাস শুরু হওয়ার আগে গরুর গোবর পরিষ্কার করতাম আমি। কিন্তু দুর্গন্ধ থেকে যেত।’
তাহলে কীভাবে প্রযুক্তি শিল্পের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেন তিনি?
প্রাথমিক অভিযান
আন্নাদুরাইয়ের পায়ে পরার মতো কোনো জুতা ছিল না। আর তার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছিল যখন তার বয়স ৮ বছর। তবে দ্রুতই পরিবর্তিত হচ্ছিল পৃথিবী। ১৯৬০ সালের ওই সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার প্রতিযোগিতা গিয়ে ঠেকেছিলও মহাকাশ পর্যন্ত। ভারতও সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল এবং ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম রকেট লঞ্চ করে দেশটি।
তবে এসবের কিছুই সাধারণ ভারতীয়দের জীবনযাত্রায় তেমন প্রভাব ফেলেনি। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর ছোট গ্রাম কোধাবাড়িতে বেড়ে উঠছিলেন আন্নাদুরাই।
তার মতো ভারতের বেশিরভাগ মানুষ তখন শিল্প-পূর্ব যুগে বাস করছিলেন যেখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ ছিল অপ্রতুল।
মেধাবী শিক্ষার্থী
তবে দরিদ্রতা পড়াশোনায় তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিজ্ঞান আর গণিত পছন্দ ছিল তার। আর ঘৃণা করতেন ইতিহাস।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা বলতেন যে, ইতিহাস তৈরি করতে হলে ইতিহাস পড়তে হয়।’
তার বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। আর সেলাইয়ের কাজ করে কিছুটা বাড়তি উপার্জন করতেন তিনি। পরিবারকে ভরণপোষণের জন্য তার আয় যথেষ্ট হলেও সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই থাকতো না। এক সময় তিনি ভেবেছিলেন, আন্নাদুরাই হয়তো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগই পাবে না।
কিন্তু হঠাৎ করেই জীবন বদলে দেয়ার মতো সুযোগ পেয়ে যান কিশোর আন্নাদুরাই।
‘আমার বয়স যখন ১২ বছর, তখন রেডিওতে গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি এক বৃত্তির খবর শুনি আমি। আর আবেদনও করি’, বলেন আন্নাদুরাই।
ওই বৃত্তি তার আর্থিক সংকট কাটিয়ে তাকে পাশের শহরের একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, ‘সেসময় আমার বাবা প্রতিমাসে ১২০ রুপি আয় করতেন। আর বৃত্তির অর্থ ছিল বছরে এক হাজার রুপি।’
১৯৭০ সালে ১ ডলার সাড়ে ৭ রুপির সমান ছিল।
জেলার সেরা আর রাজ্যে ৩৯তম মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে স্কুল শেষ করেন তিনি, যা পরবর্তীতে তাকে আরও শিক্ষার খরচ যোগাতে সহায়তা করে।
প্রাথমিক সংগ্রাম
আন্নাদুরাই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির কিছুদিন আগে, ১৯৭৫ সালে রাশিয়ার সহায়তায় আরিয়াভাটা নামে নিজেদের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা।
স্যাটেলাইটের সংকেত গ্রহণের জন্য ব্যাঙ্গালোরের বেশ কিছু শৌচাগারকে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্যকেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়।
৬ মাস চলার জন্য স্যাটেলাইটটির নকশা করা হয়েছিল। তবে এটি ঠিকভাবে কাজ করেছিল মাত্র ৪ দিন।
৪ বছর পর, স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম ভারতের নিজেদের তৈরি একটি রকেট উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে আন্নাদুরাই ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএসআরও-তে যোগ দেন।
তিনি বলেন, ‘অ্যাসবেসটস শিটের নিচে আমরা কাজ করতাম। আর প্রতি চার বছরে মাত্র একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতাম।’
তামিলভাষী হওয়ার কারণে এবং ইংরেজি ও হিন্দিতে দুর্বলতা থাকায় যোগাযোগে বেশ অসুবিধার মুখে পড়তে হতো তাকে।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় মানুষ আমার ইংরেজি শুনে হাসতো।’
তিনি প্রথম যে স্যাটেলাইটটিতে কাজ করেছিলেন সেটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে একটি কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য নকশা করা হয়েছিল।
কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় সেটি বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়।
চাঁদে চিত্র ধারণ
শুরুটা খারাপ হলেও, ৮টি আইএনএসএটি বা ইনসাট স্যাটেলাইট অভিযানে কাজ করেছেন তিনি।
ইনসাট’স হলো ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির মূল চালিকাশক্তি। যেগুলো আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে শুরু করে ম্যাপিং এবং সম্প্রচার-সবই করতো।
২০০৩ সালে, চন্দ্রাভিযান হাতে নেয়ার আগে, একবার মহাকাশ সংস্থা ছেড়ে দিয়ে বেসরকারি খাতে লোভনীয় চাকরি করারও চিন্তা করেছিলেন আন্নাদুরাই।
ড. মিলস্বামী আন্নাদুরাই
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আগের অভিযানগুলোতে যেসব বিষয় বাদ পড়েছে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা।
আমরা জানতে চেষ্টা করেছিলাম যে, চাঁদে কি পরিমাণ পানি রয়েছে এবং এগুলোর গঠন কেমন।’
২০০৮ সালের এক বৃষ্টিময় বর্ষার দিনে চেন্নাই থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরের শ্রীহরিকোটা থেকে চন্দ্রাভিযান-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি চাঁদের বুকে ভারতের পতাকা স্থাপন করে এবং চাঁদের পানির উপস্থিতি প্রমাণ করে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এই সফলতা উদযাপন করা হয়। তবে যেখানে লাখ লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের অর্থ নেই সেখানে এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ খরচ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।
ড. আন্নাদুরাই অটল ছিলেন। তিনি বলেন, ‘দরিদ্রের একটা বড় কারণ ছিল শিল্প বিপ্লবে আমাদের অংশগ্রহণ না করা। জাতি হিসেবে এতো বিপুল মানব সম্পদ থাকা সত্ত্বেও মহাকাশ গবেষণার সুবিধা না নিয়ে শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারি না আমরা।’
মঙ্গল এবং আরও কিছু
কয়েক বছর পর, তার নেতৃত্বেই প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গলে প্রথম চেষ্টাতেই নমুনা পাঠাতে সক্ষম হয় ভারত। তিনি বলেন, ‘চাঁদে পৌঁছাতে হলে আমাদের স্যাটেলাইটকে প্রতি সেকেন্ডে এক কিলোমিটার যেতে হতো। আর মঙ্গলে পৌঁছাতে হলে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার প্রয়োজন হয়, যা করতে বড় ধরনের পরিকল্পনা ও গণনার দরকার হয়েছিল।’
ভারতের মঙ্গল পরিক্রমণকারী যানকে ‘লাল গ্রহে’ পৌঁছাতে সাড়ে ১০ মাস লেগেছিল। খরচ হয়েছিল ৭৩ মিলিয়ন ডলার। তবে এটি ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সস্তা মঙ্গল অভিযান।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার উপদেষ্টা প্রফেসর ইউ আর রাওকে বলেছিলাম যে, আপনার স্যাটেলাইট আরিয়াভাটার ছবি দুই টাকার ব্যাংক নোটে ছাপা হয়েছিল। আর আমার মঙ্গল অরবিটারের ছবি ছাপা হয়েছে দুই হাজার টাকার ব্যাংক নোটে। আমরা হাজার গুণ এগিয়ে গেছি।
ড. আন্নাদুরাই চাঁদে দ্বিতীয় অভিযানের সমাপ্তি দেখে যেতে চেয়েছিলেন। তবে গত বছরের জুলাইয়ের শেষ দিনে অবসর নেন তিনি।
তিনি মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক জাতিসংঘের কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন টানা দুই বছর। ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরষ্কারসহ বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জিতেছেন তিনি।
ড. আন্নাদুরাই বলেন, ‘আমি ১০ বছর বয়সে সাঁতার শিখতে চেয়েছিলাম বলে আমার বন্ধুরা আমাকে চাষাবাদের জন্য তৈরি বড় একটি কুপে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল। ভেসে থাকতে হাত-পা ছুড়েছিলাম আমি। অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ংকর।
‘তবে আমি খুব দ্রুত সাঁতার শিখেছিলাম। আমার কঠিন অবস্থা আমাকে শিখিয়েছে যে, দরিদ্রতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা।’
এখন তিনি নিয়মিত তার গ্রামে যান এবং তার পুরনো স্কুলটি সংস্কারে তহবিল সংগ্রহ করছেন।
- নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যেত
- বস্তিবাসী-রিকশাচালকও ফ্ল্যাটে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
- টুংগীপাড়া চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাবুলের অপকর্মের তথ্য ফাঁস
- জনপ্রিয় ডাচ অভিনেতার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ. চলছে তোলপাড়
- বৃষ্টির জন্য মোংলায় ইসতিসকার নামাজ ও মোনাজাত
- নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, উত্তাল ইসরাইল
- মুক্তির আগেই ইতিহাস গড়ে ১০০০ কোটির ব্যবসা পুষ্পার
- কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনে উৎপাদিত শাক-সবজি উপহার শেখ হাসিনার
- ইসরায়েল হামলা চালালে এবার বৃহত্তর পাল্টা হামলা হবে: ইরান
- শাওয়ালের ৬ রোজার গুরুত্ব
- ‘ও সাকি সাকি’ গান: এখনো ফিজিওথেরাপি নেন নোরা ফাতেহি
- গরম আরও বাড়তে পারে, আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাত বাড়ার আভাস
- সুপারির খোলের পরিবেশবান্ধব প্লেট, বাটি, ট্রে, ফুড বক্স
- শ্রীলঙ্কার রানপাহাড়, বিশ্বরেকর্ড গড়ে জিততে হবে বাংলাদেশকে
- বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে : হাইকোর্ট
- স্যাটেলাইট ট্যাগ নিয়ে সুন্দরবনের কুমির ঘুরছে বরিশালের নদীতে
- শরীরের ওপর দিয়ে চলে গেল ট্রেন, ভাগ্যক্রমে বাঁচল কিশোরী
- ‘আম্মু, তোমাকে ভালোবাসি’, ডেঙ্গুতে মৃত মাকে ছোট্ট আইয়ানের চিঠি
- বিয়ে করছেন কঙ্গনা, পাত্র কে?
- মেঘনায় ট্রলারডুবির ঘটনায় ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার
- হার্ভার্ডের অধ্যাপক ও বিখ্যাত বিজ্ঞানীর ইসলাম গ্রহণ
- বিগ বস` বিজয়ী এলভিশ গ্রেপ্তার
- মুশতাক দম্পতি টিকটক করলে সমস্যা নেই
- শৈলকুপায় মাটি খুঁড়ে মিলল ১৫ পবিত্র কোরআন শরিফ
- মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দেয় ৭ মার্চের ভাষণ: প্রধানমন্ত্রী
- দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্যদের নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়
- চলতি মাসেই কমছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম
- রমজানে ভোক্তাদের যেন হয়রানি না হয়: প্রধানমন্ত্রী
- ভোমরা স্থলবন্দরের কাস্টমস অফিস এখন অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির আখড়া
- ভোমরা স্থলবন্দরে দুর্নীতি, ডেপুটি কমিশনারকে প্রত্যাহারের দাবি
- মুক্তির আগেই ইতিহাস গড়ে ১০০০ কোটির ব্যবসা পুষ্পার
- কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনে উৎপাদিত শাক-সবজি উপহার শেখ হাসিনার
- নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, উত্তাল ইসরাইল
- জনপ্রিয় ডাচ অভিনেতার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ. চলছে তোলপাড়
- বৃষ্টির জন্য মোংলায় ইসতিসকার নামাজ ও মোনাজাত
- টুংগীপাড়া চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাবুলের অপকর্মের তথ্য ফাঁস
- বস্তিবাসী-রিকশাচালকও ফ্ল্যাটে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
- নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যেত