• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

যেন গাড়ির ‘কবরস্থান’

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

চট্টগ্রাম: লাইসেন্সবিহীন, চোরাই বা অবৈধ, দুর্ঘটনা কবলিত, মাদক পরিবহন, অবৈধ মালামালসহ বিভিন্ন কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করে বাস, ট্রাক, রিকশা, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বছরের পর বছর এসব গাড়ি থানার হেফাজতে কিংবা ডাম্পিং স্টেশনে পড়ে থাকে অযত্ম-অবহলোয়। ধীরে ধীরে এ সব যানবাহন নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম নগরের মনসুরাবাদ ও সদরঘাটে গাড়ি ডাম্পিং স্টেশন থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। ফলে নগরের বিভিন্ন থানা কম্পাউন্ড এখন অলিখিত ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই প্রতিটি থানায় জব্দ করা গাড়ি সংখ্যা বাড়ছেই। বর্তমানে নগরের চাঁদগাও, বন্দর, ডবলমুরিং, কোতোয়ালি, পাহাড়তলী পাঁচলাইশ, বায়েজীদ, পতেঙ্গা, হালিশহর, খুলশী, বাকলিয়া, কর্ণফুলী, চকবাজার, আকবর শাহ, সদরঘাট, ইপিজেড থানাসহ নগরের প্রায় সব থানাতে দেখা যায় জরাজীর্ণ গাড়ির ভাগাড়।

অভিযোগ রয়েছে, জব্দ করা অনেক গাড়ি ডাম্পিং স্টেশন কিংবা থানা কম্পাউন্ডে থাকা অবস্থায় এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যায়। ফলে জব্দ করা গাড়ির চেহারাই পাল্টে যায়। আর এ কারণে গাড়ির মালিকরাও এসব গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে খুব একটা আগ্রহী হয়ে উঠেন না। আবার আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করাও যাচ্ছে না। এতে এক দিকে যেমন গাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন জানান, বিভিন্ন মামলায় গাড়ি জব্দ করা হয়। বেশির ভাগ গাড়ি মনসুরাবাদ ও সদরঘাট ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়। আমার থানায়ও জব্দ করা কয়েকটি গাড়ি রাখা আছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় গাড়ির মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আদালতের অনুমতি ছাড়া এ সব গাড়ি নিলামে বিক্রি করারও উপায় নেই।

তার কথাতেই পরিস্কার মহানগরের ১৬টি থানার প্রায় প্রতিটি কম্পাউন্ড এখন ছোট-বড় ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। এসব থানায় প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলসহ হাজারেরও বেশি গাড়ি পড়ে আছে। জব্দ করা গাড়ির মধ্যে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের সংখ্যাই বেশি। জব্দ করা গাড়িগুলো থানা প্রাঙ্গণের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রাখে। ফলে গাড়িগুলো পাশের রাস্তা কিংবা অন্য কোনো খালি জায়গায় রাখতে হয়। তাতে জব্দ করা গাড়ির বাড়তি চাপ পুলিশের স্বাভাবিক কাজে সমস্যার সৃষ্টি করছে। আইনি প্রক্রিয়ায় কয়েক বছর পর মালিকরা গাড়ি ফিরে পেলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
এদিকে মনসুরাবাদ ও সদরঘাট ডাম্পিং স্টেশনে অযত্ন আর অবহেলায় শত শত নতুন-পুরনো গাড়ি পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বিভিন্ন মডেলের দামি গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ট্রাক ও বাস। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা এসব গাড়ির বেশিরভাগই মরিচা ধরে ভেঙে পড়ছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আর চোরদের তৎপরতায় অনেক গাড়িরই এখন কঙ্কাল দশা। কোনোটির চাকা চুরি হয়ে গেছে, কোনোটির গ্লাস উধাও, আবার কোনোটির শুধু বডি পড়ে আছে।

কিছু কিছু গাড়ির চাকাসহ এর অবকাঠামো মাটিতে দেবে গিয়ে সেখানে গাছ-গাছালি ও জঙ্গল হয়ে গেছে। কোটি টাকার গাড়ি পরিণত হচ্ছে ভাঙারিতে। এখানে ডাম্প করা গাড়িগুলোর অনেকটির মালিকরা আর যোগাযোগ করছেন না। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে কেউ গাড়ি ফেরত পেলেও তা বিক্রি করতে হচ্ছে লোহা-লক্কড়ের দরে। 

চট্টগ্রাম মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, বিভিন্ন থানায় কি পরিমাণ গাড়ি জব্দ করা আছে কিংবা আদৌ আছে কি-না সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এটা সংশ্লিষ্ট থানা বলতে পারবে। তবে এটা ডাম্পিং স্টেশনে আসার পরে আমাদের হিসেবের মধ্যে আসবে। বর্তমানে বৈধ ও কাগজপত্র না থাকা, রেজিস্ট্রেশন না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ১২০টি গাড়ি জব্দ করা হয়। এসব গাড়ির মালিকরা সঠিক কাগজপত্র নিয়ে এলে বা আদালত থেকে অনুমতি পেলে মালিককে গাড়ি ফেরত দেওয়া হয়। মাদকসহ অবৈধ মালামাল পরিবহন ও দুর্ঘটনার দায়ে জব্দ করা গাড়িগুলোর বিষয়ে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে। ডাম্পিং স্টেশনগুলোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এখানে গাড়ি পাঠাতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারার কারণে গাড়িগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। আর থানা কম্পাউন্ডে যেগুলো রাখা সেসব বিভিন্ন মামলার আলামত বলেও জানান চট্টগ্রাম মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) নাজমুল।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা