• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ভারতকে এগিয়ে আসার আহ্বান

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০১৯  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে শুধু আশ্রয় নয়, জীবন ধারণের সব উপকরণ সরবরাহ করে পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এই কাজটি দ্রুত করতে ভারতসহ বন্ধু প্রতীম অন্য দেশগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের চাপ প্রয়োগে এটিই উপযুক্ত সময়।

শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের ইনানীতে একটি তারকা হোটেলে দুই দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ-ভারত নবম ফ্রেন্ডশিপ ডায়ালগ’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। নয় দফা সুপারিশে ‘কক্সবাজার ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাত, আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতের সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করা জরুরি বলে একমত হন দুই দেশের অংশগ্রহণকারীরা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। কিন্তু আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আলোচিত হয় বাংলাদেশ। সন্ত্রাসবাদের স্থান এই দেশে নেই। শেখ হাসিনা সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে এটি দমন করা হচ্ছে।

তিনি আর বলেন, ভৌগলিকভাবেই বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং ঐতিহ্যময়। এ সম্পর্কের সূত্র ধরেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে নরেন্দ্র মোদি সরকারও আমাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়েই পাশে রয়েছে। আমরা ভারতের এই ত্যাগের কথা কোনো দিন ভুলবো না।

আবদুল মোমেন বলেন, গভীর বন্ধুত্বের কারণে ভারত আমাদের প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ সবদিক দিয়েই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। উন্নয়নে আমরা সহযোগী হিসেবে পাচ্ছি নেপাল-ভুটানসহ প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোকেও। দুই দেশের বিরাজমান সমস্যাগুলো সুনির্দিষ্ট করে তা নিরসন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈনিক অগ্রগতি ধরে রাখতে বন্ধুত্ব সংলাপ সেতুর ন্যায় ভূমিকা রাখছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গুড গভর্নেস’ তৈরিতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে তার সরকার অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে।

পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টেকনো ইন্টারন্যাশরাল কলেজ অব টেকনোলজির পরিচালক ড. রাধা তমাল গোস্বামী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের উন্নত সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ সম্প্রতি ত্রিপুরায় গ্যাস সরবরাহ ও মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়া। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে ভারত সরকার খুবই খুশি। তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বলানি খাত, আঞ্চলিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তাসহ সবদিকের উন্নয়নে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে শনিবার চলা শক্তিশালী আঞ্চলিক নিরপত্তা সেশনে বক্তারা বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি অনেক সময় সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে ধর্মকে পূজি করে কার্যক্রম চালানো দলগুলোর কার্যক্রম কঠোর নজরে রাখা দরকার।

ভারত-বাংলাদেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা উচ্চতায় রয়েছে দাবি করে বক্তারা আরও বলেন, তরুণদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার সম্ভব। বর্তমান সময় প্রযুক্তির। সন্ত্রাস ছড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। তাই প্রযুক্তিকে অপব্যবহার রোধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনা সরকার এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং অপরাধ দমনে সফলতাও পাচ্ছে।

উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বক্তারা বলেন, প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হলে আশ্রিত রোহিঙ্গারা আঞ্চলিক সন্ত্রাসের বিস্ফোরক হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি এ অঞ্চলের কোনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

প্রতিবেশগত টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক সেশনে বক্তারা বলেন, বিশ্ব পর্যটনের প্রসারতা বেড়েছে। এরই মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করা সম্ভব। দেশের সমুদ্র-পাহাড় সম্পদের ব্যবহারে যত্নবান হওয়া দরকার।

টেকনোলজি, পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেশনে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা ভারতীয় সাবেক হাইকমিশনার ভীনা শিকরি বলেন, প্রযুক্তিতে দ্রুত এগুচ্ছে বাংলাদেশ। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে ক্রমান্বয়ে যুক্ত হচ্ছে সফলতা। বলতে গেলে সব সেক্টরে সফলতার গল্প তৈরি করেছেন শেখ হাসিনা।

ভারতের রাজ্যসভার বিধায়ক ও প্রখ্যাত সাংবাদিক এম জে আকবর বলেন, চলমান সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ, যা গত ২৫ বছরের চেয়ে ভিন্ন। বাংলাদেশ সব দিক দিয়ে দ্রুত এগুচ্ছে। প্রতিবেশী হিসেবে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বন্ধুত্বপূর্ণ রাখা দরকার। দুই দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলোর যত্ন নিয়ে জনসাধারণের উপকারে ব্যবহারের উপযোগী রাখা জরুরি। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুই দেশই লাভবান হবে। এ ধারা অব্যহত রাখতে আমদানি-রফতানি বাড়াতে কাজ করা জরুরি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিয়নাল স্ট্যাডি এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ও ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ যৌথ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত নবম ফ্রেন্ডশিপ ডায়ালগ’-এর প্রথম দিন (শুক্রবার) উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই নীতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। ফ্রেন্ডশিপ সংলাপ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। এ লক্ষ্যে ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত রফতানি বাড়ানোর আহ্বান জানান স্পিকার।

সংলাপে মন্ত্রীসহ ভারতের ২৬ জন ও সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ বাংলাদেশের ৫৪ জন প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় শতাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা