• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

সিনেমা বাঁচাবে মাল্টিপ্লেক্স

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৯  

আরও একটি হল বন্ধ হয়ে গেল। রাজধানীতে প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকা অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় প্রেক্ষাগৃহ ‘রাজমনি’ সিনেমা হলটিও ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ে অব্যাহত মন্দায় টিকে থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ৩৬ বছরের পুরানো এই হলটি বন্ধ করে দিলো কর্তৃপক্ষ। পুরোটাই বাণিজ্যিক ভবন হবে, এমনকি আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স হওয়ারও কোন চিন্তা নেই বলে জানিয়ে দিলেন ভবনের মালিক। গত সপ্তাহে সিনেমা হল থেকে প্রজেক্টর মেশিন, সার্ভার খুলে ফেলার সময় করুণ চোখে তাকিয়ে ছিল হলের পুরোনো কর্মীরা।

একে একে নিভিছে দেউটি। সিনেমা নাড়িয়ে দিয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল সেই বাণিজ্য আর নেই। সিনেমা ব্যবসায় ধস নামার কারণে ঢাকার অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি হল টিকে থাকলেও তা আগামীতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলটিও ভেঙ্গে ফেলার চিন্তা করছেন মালিকরা। যে কয়টি এখনও আছে, সেগুলোর মালিকরা যেন মৃতদেহ আগলে আছেন কেবল।

 ‘পৃথিবীর নানা দেশে আর্থিক মন্দার সময়েও সিনেমা শিল্প প্রচুর ব্যবসা করেছে। আর এখন বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক শক্ত অবস্থান সেখানে উদ্যম আর উদ্যোগ থাকলে সিনেমা হবেই।’ 

সিনেমাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু হল না বাঁচলে সিনেমা বাঁচবে কি করে? কিছু মাল্টিপ্লেক্স আছে ঢাকায়, কিন্তু সারাদেশের কথা ভাবলে তা কিছুই নয়। আমাদের সিনেমা নেই, যা হয় তা মানুষ দেখে না। মানুষ দেখে না যেহেতু সিনেমা হল তাই বাণিজ্য করতে পারে না। হাতে গোনা তিন-চারটি সিনেমা হল এখন চালু। দর্শকের সংখ্যা তলানিতে ঠেকায় সেগুলোও বন্ধ করার কথা ভাবছেন মালিকেরা।

মানুষ সিনেমা দেখতে চা্য়। কিন্তু পুরোনো হলে আর নয়। মানুষের রুচিবোধ বদলেছে, সিনেমা সম্পর্কেও নতুন ভাবনা আসছে। তাই বস্তাপচা কাহিনী, নোংরা সংলাপ, কদর্য সম্পাদনা আর নোংরা দেখতে প্রিন্ট নিয়ে যে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় বাংলাদেশে সেগুলো দেখার আগ্রহ এখন অতি সাধারণ দর্শকেরও নেই। দু’একজন ভাল পরিচালক কিছু ভাল ছবি তৈরির চেষ্টা করেন, কিন্তু সেগুলো দিয়ে হল চালানো যায় না।

মাল্টিপ্লেক্সে ছবি এলে ভিড় উপচে পড়ে। এখানে যারা যায় তারা মান্ধাতা আমলের প্রেক্ষাগৃহে বসে সিনেমা দেখবে না। তার বদলে বাড়িতে বসে ইউটিউব বা নেটফ্লিক্স দেখতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু এই গল্পটা শুধু শিক্ষিত মধ্যবিত্তের নয়। ছারপোকার কামড় খেয়ে, গরমের মধ্যে সিনেমা দেখার আগ্রহ এখন আর কারোরই নেই। আসন সংখ্যা কমিয়ে যদি মাল্টিপ্লেক্স এবং রেস্তোরাঁ তৈরি করা হয় তা হলে অবশ্যই সেগুলি চলবে।

হলে লোক টানার মতো সিনেমা বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে না। একে একে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেগুলির এখন পোড়ো বাড়ির দশা। নতুন করে কোন সিঙ্গেল স্ক্রিন হল আর নির্মিত হচ্ছে না। এক ছাদের তলায় খাওয়া, কেনাকাটা, সিনেমা দেখা— সবকিছুই চাই একসঙ্গে। আর সেই লড়াইয়েই হেরে গেল সিনেমা হল।

হল না থাকলে কি সিনেমা বাঁচবে? একটা করে সিনেমা হল বন্ধ হওয়া মানে একটা করে আলোর দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া। অনেকদিন ধরেই দেশের চলচ্চিত্র শিল্প সংকটকাল চলছে হল মালিকরা বলছেন, দেশে ভালো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না, তাই দর্শক হলমুখী হচ্ছে না।

দেশীয় ছবির সংকটে ইন্ডাস্ট্রি থাকায় বিদেশি ছবি, বিশেষ করে বলিউডের হিন্দি ও উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের সিনেমা মুক্তির প্রথম দিনেই আনার সুযোগ করে দিতে পারলে হলগুলো বাঁচানো যেতো। হলে সিনেমা নেই। দেশে ছবি তৈরি হচ্ছে না। বিদেশের ছবিও সহজভাবে আনা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক হল মালিক এই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

অনেকে বলছেন, যারা সিনেমা হল বন্ধ করছেন তারা শুধু ব্যবসাটাই দেখে, ইতিহাস-সংস্কৃতি নিয়ে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যারা এটা বলছেন তাদেরও বুঝতে হবে, ব্যবসায় বিনিয়োগ করে, কর্মচারীদের বেতন দিয়ে, বিদ্যুৎ, পানির বিল পরিশোধ করে তার যদি কিছু বাড়তি আয় না হয়, তাহলে হল মালিকের মাথা থেকে ইতিহাস-সংস্কৃতি উবে যাবেই।

সিঙ্গেল স্ক্রিন হল বন্ধ হলে বিকল্প উদ্যোগ সরকারও চিন্তা করতে পারে। যারা এই সিনেমা শিল্পের সাথে জড়িত, তারা সরকারের কাছে প্রস্তাবনা নিয়ে যেতে পারেন। প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে দেশের ৬৪ জেলায় একটি করে আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এখন যে ধারা এতে করে সব স্তরের মানুষেরই আয় এবং ব্যায় সক্ষমতা বেড়েছে। এই বাস্তবতায় মানুষ পুরোনো, অসুস্থ পরিবেশের সিনেমা হলে আর যেতে চায় না।

এসব মাল্টিপ্লেক্সে নিয়মিত হলিউড, বলিউড বা অন্যান্য দেশের ভাল চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে মানুষ ভীড় করবেই। মানুষ যখন ভীড় করতে শুরু করবে তখন দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পেও একটা তাড়া আসবে ভাল ছবি নির্মাণের, প্রতিযোগিতার। এমনিতেই কিছু মানুষ, কিছু শিক্ষিত পরিচালক কিছু ছবি তৈরি করেন। কিন্তু এগুলো সবই বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। ভাল ছবির নির্মাণ ও এর বাজার সৃষ্টিতে একটা সিনেমার আলোড়ন দরকার।

পৃথিবীর নানা দেশে আর্থিক মন্দার সময়েও সিনেমা শিল্প প্রচুর ব্যবসা করেছে। আর এখন বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক শক্ত অবস্থান সেখানে উদ্যম আর উদ্যোগ থাকলে সিনেমা হবেই।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা