• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ষাট গম্বুজ বার্তা

পেঁয়াজের দামে আপেল, বাজারে ভানুমতির খেল!

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৯  

পেঁয়াজের দাম কমবে তো দূরের কথা বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে গেছে যে এক কেজি পেঁয়াজ আর এক কেজি আপেলের দাম এখন সমান। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এখেন কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে এক কেজি আপেল পাওয়া যায়। যে যেভাবে পারে দাম বাড়াচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো নিয়ামকই কাজ করছে না। মূল্যবৃদ্ধির জন্য নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে। কিন্তু পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদও রয়েছে। তাই দাম বাড়ার বিষয়টি কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। এমনিতেই দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে, তার ওপর পেঁয়াজের দাম বাড়ায় যেন বাজ পড়ছে ভোক্তাদের মাথায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো দেখার কি কেউ নেই?

জাগো নিউজের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারত রফতানি বন্ধ করলেও মিয়ানমার ও মিসর থেকে আসছে পেঁয়াজ। এরপরও দাম কমছে না। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে। বৃষ্টির অজুহাতে শুক্র ও শনিবার দুই দফায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

 পেঁয়াজের উচ্চ মূল্য রাখার কারণে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। অতিরিক্ত দাম নেয়ায় জরিমানার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু শ্যামবাজারে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযান চালানো হয়নি। অথচ এখান থেকেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শ্যামবাজারে দাম কমলে অন্য জায়গায়ও তার প্রভাব পড়বে। তাই পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে অবিলম্বে শ্যামবাজারে অভিযান পরিচালনা করা হোক 

তাদের অভিমত, ভারত রফতানি বন্ধ করার পর পেঁয়াজের দাম এক লাফে অনেক বেড়েছে। এরপর সরকারের তৎপরতায় মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এতে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। সংশ্লিষ্টরা যদি শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে জরিমানা করে, তাহলে দাম কমে যেতে পারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার খবরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সেঞ্চুরিতে পৌঁছে দেশি পেঁয়াজের কেজি। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশ কিছুদিন পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শুক্র ও শনিবার দুই দফায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

শনিবার ঢাকার সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিসর থেকে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা, যা শুক্রবার ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। শুক্রবারের আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা কেজি।

পেঁয়াজের উচ্চ মূল্য রাখার কারণে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। অতিরিক্ত দাম নেয়ায় জরিমানার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু শ্যামবাজারে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযান চালানো হয়নি। অথচ এখান থেকেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শ্যামবাজারে দাম কমলে অন্য জায়গায়ও তার প্রভাব পড়বে। তাই পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে অবিলম্বে শ্যামবাজারে অভিযান পরিচালনা করা হোক।

শেষ পর্যন্ত গতকাল রোববার অভিযান চালানো হলেও যে জরিমানা করা হয় তা অতি সামান্য। এতে আখেরে কোনো কাজ হবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন আরও বড় শাস্তি।

কথায় আছে, দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। ব্যবসায়ীদের আমরা দুর্জন বলতে চাই না। আর সব ব্যবসায়ীর দায়-দায়িত্ব এবং নীতিনৈতিকতাও একই পাল্লায় মাপা ঠিক হবে না। তবে একশ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর লাভ ও লোভের কারণেই যে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। মুনাফালোভী এই মানসিকতা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সরকারের হাতে খুব একটা নেই। তারপরও টিসিবিকে কার্যকর করে একটি প্যারালাল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রেখে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়। সরকার বলছে, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এরপরও পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হল কী করে। এক্ষেত্রে কী কারো কোনো দায়-দায়িত্ব নেই?

যে কোনো উসিলায় দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আইন-কানুন নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই নেই এখানে। ভোক্তাদের পকেট কাটা হবে আর সরকার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা হতে পারে না। বাজারে নজরদারি বাড়ানো এবং সিন্ডিকেটধারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। অবিলম্বে পেঁয়াজের মূল্য জনসাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে যার যা করণীয় রয়েছে সেটি করতে হবে। এজন্য সরকার-ব্যবসায়ী সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। ত্যাগ করতে হবে মুনাফালোভী মানসিকতা।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা